আজ শনিবার, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

স্টার জলশা জি বাংলার ‘চাবি’ ডিস বাবুর হাতে

নিজস্ব প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জে স্যাটেলাইট চ্যানেলের বিনা টাকায় দেখতে পাওয়ার সুবিধা থাকলেও স্টার জলসা, জি বাংলা সহ বিভিন্ন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় ক্যাবল নিয়ন্ত্রক কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু যিনি ‘ডিস বাবু’ হিসেবেই পরিচিত। তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে ভুয়া ও মনগড়া তথ্য দিয়ে গ্রাহকদের সান্তনা দিতে চাইছেন বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন। গ্রাহকরা বলছেন, ‘এসব ভুয়া ও মনগড়া যুক্তি দিয়ে ডিস বাবু তার স্যাটেলাইট ক্যাবল ব্যবসার মধ্য দিয়ে সেটটপ বক্স ব্যবসার স্বার্থ হাসিল করতে চাইছেন।’

২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন স্থানে স্যাটেলাইট চ্যানেলের নিয়ন্ত্রক বাবুর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এসময় গ্রাহকেরা ডিস ব্যবসায়ী বাবুর বক্তব্যকে মনগড়া ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত কিছুদিন পূর্বে শহরের বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয় স্টার জলসা, জি বাংলা সহ বিভিন্ন চ্যানেল বন্ধ করে গ্রাহকদের সেটটপ বক্স কিনতে বাধ্য করা হয়। এ নিয়ে যখন গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল তখন বুধবার ২৫ অক্টোবর বিকেলে ডিস ব্যবসার নিয়ন্ত্রক বাবু নানা যুক্তি দেখিয়ে সেটটপ বক্স কেনার পক্ষে কথা বলেন। তবে কেউ যদি সেটটপ বক্স ব্যবহার না করলে সেই  গ্রাহকের ক্যাবল লাইনে এই চ্যানেলগুলো বন্ধ করে রাখার দায়ভার স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরদের উপর চাপান।

শহরে স্যাটেলাইট ক্যাবল নিয়ন্ত্রক কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সেটটপ বক্স লাগানো তাগিদ সবাইকে দিয়েছি কিন্তু এটা কাউকে বাধ্যতামূলক করিনি। সেটটপ বক্স লাগালে দেশের উন্নয়ন হবে যেকারণে সবাইকে এটা করতে বলছি। সেটটপ বক্স লাগালে প্রতি গ্রাহক প্রতি সরকার ৪৫ টাকা করে ট্যাক্স পাবে। তাছাড়া আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে সেটটপ বক্স লাগাতে সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক করা হবে। তবে কেউ যদি সেটটপ বক্স না লাগায় সেকারণে তার লাইনে সমস্যা করা হবে তা কিন্তু নয়। আমি ডিশ ডিস্ট্রিবিউট করি আর এলাকার স্থানীয় ক্যাবল অপারেটররা সাপ্লাই দেয়। এটা আসলে আমার কোন দোষ না। যারা স্থানীয় ডিশ ব্যবসা করে তারা এই সমস্যা করছে। যদি কোন গ্রাহক ঠিক মত সেবা না পায় তাহলে বিল দিবেন না। আর বিল না দিলেই লাইন ঠিক করে দেবে। এ জন্য স্থানীয় ক্যাবল অপারেটররা দায়ী। আর সেটটপ বক্স ৩ হাজার টাকা করে সরবরা করা হচ্ছে। তাতে এক বছরের ওয়ারেন্টি আছে। আর তাতে ২শর অধিক চ্যানেল স্বচ্ছ দেখা যাবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ক্যাবল অপারেটররা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমরা কিন্তু স্যাটেলাইট ক্যাবলের চ্যানেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করি না। এটা শুধুমাত্র একজনই নিয়ন্ত্রণই করে সেট কে সবাই জানে (ডিস ব্যবসায়ী কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু)। কোন চ্যানেল বন্ধ করা বা না করা এটা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ন্ত্রক নিজে। একমাত্র তারের সমস্যার কারণে হয়তো কোন কোন চ্যানেল অস্বচ্ছ থাকতে পারে। কিন্তু সেটা সাময়িক সমস্য স্থায়ী নয়। আর কোন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কিংবা দায়িত্ব কোনটাই আমাদের নেই।

গ্রাহকেরা বলছেন, ‘যেখানে সরকার আগামী ২০১৯ সালে সেটটপ বক্স লাগানোর কথা নিয়ন্ত্রক বাবু নিজ মুখেই স্বীকার করলেন; তাহলে তিনি এতো আগে কেন নিজ থেকে মানুষের ঘারের উপর এই বোঝাটা চাপিয়ে দিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করছেন। রাজধানীতে সেটটপ বক্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে একথা বলে নারায়ণগঞ্জ শহরের সাথে তুলনা করাটা নিতান্তই মনগড়া যুক্তি। আমরা স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, ‘ডিস নিয়ন্ত্রকই বাবুই চ্যানেল বন্ধ কিংবা চালু রাখার একমাত্র স্বত্ত্বাধিকারী। তিনি ছাড়া আর কেউ এ কাজ করতে পারবেনা। আর যদি কেউ এ কাজ করে থাকে তাহলে সেটা তার নির্দেশ ছাড়া সম্ভব না। তিনি আসলে সেটটপ বক্স কিনতে আমাদের প্রিয় চ্যানেলগুলো বন্ধ করে সেটটপ বক্স কিনতে বাধ্য করছে। আসলে এই সেটটপ বক্স নিয়ে তার বিশাল একটা ব্যবসা রয়েছে তাই তিনি গ্রাহকদের এই বক্স কিনতে বাধ্য করছে। সেটটপ বক্সের প্রকৃত দাম ১৪-১৫ টাকা কিন্তু তিনি দ্বিগুণ টাকায় বিক্রি করছে।

একাধিক সূত্র বলছে, ডিস বাবু চায়না (চীন) থেকে সেটটপ বক্স আমদানি করে। যদিও তিনি অবশ্য এই কথা  সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছেন। তবে এই বক্স নিয়ে বিশাল কোন ব্যবসার রহস্য তিনি খুঁজে পেয়েছেন যে কারণে তিনি এই বক্স কিনতে গ্রাহকদের বাধ্য করছেন। শহরের ডিসের লাখো গ্রাহক রয়েছে তাই প্রত্যেককে বাধ্য করা হয়ে সেটটপ বক্সের বিশাল একটা ব্যবসা হয়ে যাবে। আর চায়না থেকে আমদানি করা সেটটপ বক্সগুলো নিয়ে ব্যবসার কথা চিন্তে করেই তিনি গ্রাহকদের কিনতে বাধ্য করে চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন। তাছাড়া এই বক্সের দাম ১৫শ টাকা হলে দ্বিগুণ দামে অর্থাৎ ৩হাজার টাকায় বিশাল মুনাফার আশায় তিনি নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন।